অবশেষে ময়মনসিংহ বিভাগ হলো। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনাÑ এ চারটি জেলা নিয়ে দেশের অষ্টম বিভাগ হিসেবে ময়মনসিংহ বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠপ্রশাসন শাখা-৩-এর প্রজ্ঞাপনে সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী স্বারিত এক গেজেটের মাধ্যমে বিভাগটি প্রতিষ্ঠিত হলো।
অচিরেই শুরু হবে নবগঠিত বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের ৩ নম্বর ভবনেই বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির সম্ভাব্য অফিস স্থাপন করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
দুই যুগের বেশি সময় ধরে চলমান আন্দোলনের পর দেশের অন্যতম বৃহৎ জেলা ময়মনসিংহসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের চার জেলা নিয়ে বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত গত ১৪ সেপ্টেম্বর নিকারের বৈঠকে অনুমোদন পায়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ বিভাগের ঘোষণা দেন।
ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়নের জন্য ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদ ও জেলা নাগরিক আন্দোলন ও উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ ১৯৮৯ সাল থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয়টি জেলা নিয়ে ময়মনসিংহকে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। পরে বিরোধদলীয় নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেন। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে কেউ ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন করেননি। অবশেষে বর্তমান সরকার ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন করে। ময়মনসিংহ বিভাগ হওয়ায় জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বিভাগ বাস্তবায়নের আন্দোলনে জড়িতদের অভিনন্দন জানান।
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন ও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান জানান, ১৯৮৯ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে বিভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু হয়। সভা-মিছিল, সড়ক অবরোধ, রাজপথে অবস্থান, রাস্তায় নীরবতা পালন, মোটর শোভাযাত্রার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ায় আগামী ১৮ অক্টোবর রোববার বেলা ১১টায় স্থানীয় টাউন হল থেকে বিজয় ও আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে।
জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী সাংবাদিকদের জানান, ময়মনসিংহ বিভাগ হওয়ায় জেলা প্রশাসক ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের বাসিন্দা হিসেবে তিনি আনন্দিত। ময়মনসিংহ বিভাগের কার্যক্রম গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। প্রথম বিভাগীয় অফিস হবে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের তিন নম্বর ভবনে। শিগগিরই প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হবে।
ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু ময়মনসিংহ বিভাগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
নবগঠিত এ বিভাগের আয়তন হবে ১৩ হাজার ৬৩১.১২ বর্গকিলোমিটার। ঢাকা বিভাগকে ভেঙে নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে রয়েছে মোট ২৪টি আসন, উপজেলা ৩৫টি, থানা ৩৭টি, পৌরসভা ২৬টি, ইউনিয়ন ৩৫২টি এবং গ্রাম ৭ হাজার ৩০টি। ময়মনসিংহে ১ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৪৭ জনসংখ্যা রয়েছে। আর বিভাগে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১০১০ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার। আয়তনে সবচেয়ে বড় জেলা ময়মনসিংহ (৪,৩৯৪.৫৭ বর্গকিলোমিটার) এবং আয়তনে সবচেয়ে ছোট জেলা- শেরপুর (১,৩৬৪.৬৭ বর্গকিলোমিটার)। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনার সাথে টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলা রেখে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের প্রস্তাবে গত ২৬ জানুয়ারি, ২০১৫ সালে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনে টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলাকে ঢাকার সাথেই রাখা হয়। ময়মনসিংহ বিভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে জেলা ছিল ১৭টি। নতুন বিভাগ হওয়ায় এখন ঢাকা বিভাগে রয়েছে ১৩টি জেলা। ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৭৮৭ সালের ১ মে। ১৯৮৪ সালে সব মহকুমা জেলায় উন্নীত করার সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার ফলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও শেরপুর সব মহকুমাই জেলায় উন্নীত হয়।
No comments:
Post a Comment